Accounting 6th Week Class 9 Assignment Answer
তারিখ ঃ ০৭ জুন, ২০২১
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক ‘ক’ উচ্চ বিদ্যালয় কুমিল্লা।
বিষয় ঃ মানুষের মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাব বিজ্ঞানের ভূমিকা বিষয়ক প্রতিবেদন।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আপনার আদেশ নং হা.আ.সা.উ.বি ০৬/২০২১ তারিখ ঃ ০৭ জুন ২০২১ অনুসারে “হিসাব বিজ্ঞান মানুষের মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাব বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে” শীর্ষক প্রতিবেদনটি নি¤েœ পেশ করছি।
ভূমিকাঃ হিসাববিজ্ঞান শব্দটি “হিসাব” ও “বিজ্ঞান” শব্দ দুটির সম্মিলিত রূপ। আভিধানিক অর্থে হিসাব বলতে গণনা বুঝায়। পারিভাষিক অর্থে হিসাব বলতে অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি, দায় ও আয়-ব্যয় সংক্রান্ত লেনদেনের বিবরণকে বুঝায়। অন্যদিকে বিজ্ঞান বলতে কোন বিষয়ে সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল জ্ঞানকে বুঝায়। সুতরাং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে লিপিবদ্ধকরণ, সংরক্ষণ, আর্থিক ফলাফল ও অবস্থা নির্ণয় এবং বিশ্লেষণ করার সুসংবদ্ধ জ্ঞানকে হিসাববিজ্ঞান বলে।
হিসাব বিজ্ঞানের ধারণাঃ হিসাববিজ্ঞান এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আর্থিক কার্যাবলি হিসাবের বইতে সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধ করা যায় এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে আর্থিক কার্যাবলির ফলাফল জানা যায়। অর্থাৎ হিসাববিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করে হিসাবের বিভিন্ন বিবরণী ও প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানা যায়। এ কারণেই হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়। অ.ড. ঔড়যহংড়হ এর মতে, “অর্থের মাপকাঠিতে পমিাপযোগ্য ব্যবসায়িক লেনদেন সমূহের সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সুসংবদ্ধ লিপিবদ্ধকরণ, আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ, বিশ্লেষণ ও বিশদ ব্যাংখ্যাকরণকে হিসাববিজ্ঞান বলে”। এ সকল প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ ব্যবসার পরিচালকগণকে ভবিষ্যত ব্যবসা পরিচালনা বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে থাকে।
হিসাব বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য- হিসাববিজ্ঞানের মূল কাজ হল ব্যয়-উপযোগিতা বিশ্লেষণ, নিরীক্ষণ এবং আর্থিক বিবরণী প্রকাশ। হিসাববিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য হল আর্থিক লেনদেনগুলো হিসাবের বইতে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধকরণ তা হবে হিসাববিজ্ঞানের নীতি অনুসারে। যদি লিপিবদ্ধকরণ সঠিক না হয় তাহলে হিসাবের আর্থিক বিবরণী তার সঠিকতা হারাবে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল ও অবস্থা নিরুপন করা হিসাববিজ্ঞানের আরো একটি উদ্দেশ্য। কারণ হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়, লাভ-ক্ষতি, দেনা-পাওনা ইত্যাদির হিসাব ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় লেনদেনের হিসাব পাওয়া যায়।
হিসাব বিজ্ঞানের উৎপত্তিঃ হিসাব বিজ্ঞানের উৎপত্তি ইতালিতে। ১৪৯৪ সালে ইতালিয়ান গনিতবিদ লুকা প্যাসিওলি গণিতশাস্ত্রের (সুম্মা ডি এরিথিমেটিকা, জিওমেট্রিকা, প্রপোরসোনিয়েট, প্রোপোরসনালিটা) উপর একটি বই লেখেন। এই বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে তিনি হিসাববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেন।
সমাজ ও পরিবেশের সাথে হিসাব বিজ্ঞানের সম্পর্ক- হিসাববিজ্ঞান শুধু মুনাফা নির্ণয়ে ব্যবহার হয় না। মুনাফা নির্ণয়ের পাশাপাশি ব্যবসার প্রতিষ্ঠা কর্তৃক সমাজ এবং পরিবেশেরও যাতে কোনো রকম ক্ষতি না হয়, হিসাববিজ্ঞান সেদিকটিতেও অবদান রাখে। যেমন- জলবায়ুদূষণ রোধে প্রতিষ্ঠান কিছু অর্থ খরচ করবে এবং হিসাবরক্ষক তার হিসাব রাখবে এবং সে হিসাব থেকে বোঝা যাবে ব্যবসার মালিক সমাজ এবং পরিবেশ সম্পর্কে কতটুকু সজাগ। বিশেষ করে তেল কোম্পানিগুলো বায়ুদূষণ রোধে অনেক ব্যয় করে থাকে। অথবা শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া আশপাশের পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। ব্যবসায়ের মালিক ও হিসাবরক্ষককে এর প্রতিরোধে অর্থ খরচ করতে হয়, হিসাব রাখতে হয় এবং এ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতিকে অনুসরন করে চলতে হয়।
হিসাব বিজ্ঞান ও মূল্যবোধঃ হিসাববিজ্ঞান সমা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য উপাদান হচ্ছে মূল্যবোধ। যে সকল ধারণা; বিশ্বাস, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য মানুষের আচার আচরণকে এবং কার্যাবলীকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সে গুলোকে একত্রে মূল্যবোধ বলে। মূল্যবোধ হলো ব্যক্তি ও সমাজের চিন্তা চেতনা বিশ্বাস ধ্যান-ধারণা প্রভৃতি সমন্বয়ে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা মানদন্ড যার দ্বারা মানুষ কোন বিষয়ে ভালো মন্দ বিচার করে থাকে। মূল্যবোধ সৃষ্টিতে হিসাব বিজ্ঞানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- (ক) সততা ও দায়িত্ববোধ বিকাশ। (খ) ঋণ পরিশোধে সচেতনতা। (গ) সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধ সৃষ্টি। (ঘ) জালিয়াতি ও প্রতারণা প্রতিরোধ করে তখন জ্ঞান মূল্যবোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
হিসাব বিজ্ঞান ও জবাবদিহিতাঃ কোন ব্যক্তির উপর অর্পিত দায়িত্ব ও বণ্টিত কাজ সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করে ও তার ফলাফল কারো কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে জবাবদিহিতা বলে। সমাজে বসবাসকারী সকল মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কারো কাছে জবাবদিহি করে থাকে। জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- ১। প্রতিটি দায়িত্বের কেন্দ্রে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টন করে দেওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানে অপচয়, অপব্যয়, তহবিল চুরি ও জালিয়াতি কমে যায়। ২। প্রতিটি আর্থিক কর্মকান্ডে হিসাব ব্যবস্থার প্রতিফলিত হয়। এ জন্য প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। ৩। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন ও উক্ত দায়িত্ব পালনের জন্যে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করা হলে, তারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে নিজের লক্ষ্য হিসাবে গণ্য করে দেবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় মূল লক্ষ্যে পৌঁছায়। ৪। অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে।
উপসংহার- হিসাববিজ্ঞান যেমন সঠিক ভাবে আর্থিক ফলাফল তৈরি করার মাধ্যমে মানুষকে ন্যায় ও অমূল্য চারিত্রিক গঠনে ভূমিকা রাখে। তেমনি হিসাববিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে হিসাব সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, যা একজন মানুষকে তার অর্জিত আয় হতে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে শেখায়। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাববিজ্ঞান অনেক অবদান রাখে।
Comments
Post a Comment